হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে—বেহেস্তে যত প্রকার আনন্দ দায়ক বস্তু আছে,তান্মধ্যে আল্লাহর সহিত সাক্ষাৎই হইবে সবচেয়ে অধিক আনন্দ দায়ক । বেহেস্তবাসীগণ প্রত্যেক শুক্রবার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করিবে ।
আমরা জানি, বেহেস্ত সর্বমোট আটটি । তান্মধ্যে সাতটি বেহেস্তে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগন আপনাপন পদমর্যাদা অনুসারে বাস করিবেন, কিন্তু বেহেস্তীগণের বাসের জন্য স্বভাবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হইবে এই যে,
সেখানে কেহ কাহাকেও হিংসা বা ঘৃণা করিবে না এবং কাহারও উপরে নিজেকে গৌরবাম্বিত মনে করিবে না অর্থাৎ সর্বোচ্চ মর্যাদার বেহেস্তবাসীগণ নিম্নস্তরের বেহেস্তবাসীগণকে যেমন ঘৃণা বা তুচ্ছ মনে করিবে না,
তেমনই তাহারা নিজদিগকে গোরবান্বিতও মনে করিবে না ।
পক্ষান্তরে নিম্নস্তরের বেহেস্তীগণও উচ্চস্তরের বেহেস্তীদের প্রতি কোনরূপ হিংসা করিবে না বা নিজে দুঃখিত হইবে না।
ফলতঃ বেহেস্তবাসীদের মনে যেমন কোনরূপ অভাব অভিযোগ, ভাবনা চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট থাকিবে না, ঠিক তেমনিই তাহাদের কাহারও মনে ক্রোধ, লোভ,
হিংসা,নিষ্টুরতা, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি কু-প্রবৃত্তির লেশমাত্রও থাকিবে না, সেখানে প্রত্যেকেই প্রকৃত সুখে শুখী হইবে ও পরম আনন্দে আনন্দিত হইবে। নিজ নিজ প্রত্যেকেই ভাগ্যে নিজেকে পরম ভাগ্যবান মনে করিবে ।
এতদসত্ত্বও আল্লাহর কিছু সংখ্যক বান্দা এত সুখশান্তি, এত আয়েশ আরামের উপকরণ লাভকরা সত্ত্বেও যেন তৃপ্ত হইতে পারিবে না---কিসের যেন একটা অভাবের অশান্তি সর্বদা তাহাদের মনে বিরাজ করিবে । বেহেস্তের অতুলনীয় অগণিত নিয়ামত সমূহও তাহাদিগকে প্রকৃত শান্তি দিতে পারিবে না । আলেমুল গায়েব আল্লাহ পাক তাহাদের মনোভাব জানিতে পারিয়া তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিবেন—হে আমার প্রিয় বান্দাগণ ! তোমরা এইরূপ উদাস কেন ?
তাহারা উত্তর করিবে, হে পরোয়ারদিগারে আলম! যদিও আমরা বেহেস্তের সুখ-শান্তি লাভের আশায় দুনিয়াতে তোমার এবাদত বন্দেগী করিয়া থাকি, তবে আজ তুমি আমাদের বেহেস্ত হইতে বাহির করিয়া দাও। অথবা যদি আমরা দোযখের ভয়ে তোমার ইবাদত বন্দেগী করিয়া থাকি, তবে তুমি আমাদিগকে দোযখেই পাঠাইয়া দাও । হে পরম দয়ালু আল্লাহ! বেহেস্তের অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করিয়াও আমাদের অন্তরে যে আগুন জ্বলিতেছে, তাহা দোযখের আগুন হইতে কোন অংশেই কম নহে ।
হে আলেমুল গায়েব আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি জান যে,
দুনিয়াতে আমরা বেহেস্তের আশায় অথবা দোযখের ভয়ে তোমার এবাদত বন্দেগী করি নাই, বরং তোমার সাক্ষাৎ লাভের আশায় আমরা সর্বদা হৃদয়ে পোষণ করিয়াছিলাম । সুতরাং আমাদের এবাদত যদি শুধু তোমার প্রেম লাভের উদ্দেশ্যেই হইয়া থাকে,তবে তোমার দর্শন লাভে তুমি আমাদিগকে বঞ্চিত রাখিও না ।
অতঃপর আল্লাহ পাক সেইসব ভাগ্যবান্দিগকে অষ্টম বেহেস্তে একত্রিত করিয়া নূরের পর্দা উঠাইয়া তাঁহার প্রিয় বান্দাদিগকে সাক্ষাৎ দান করিবেন । মূলতঃ বেহেস্তবাসীগণের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহপাক যত প্রকারের নিয়ামত সৃষ্টি করিয়াছেন, আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভই হইবে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ।
যাহাদের আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের সৌভাগ্য হইবে, তাঁহারা প্রধানতঃ চার শ্রেণীতে বিভক্ত । যথা- এক শ্রেণীর লোক প্রতি বৎসর একবার করিয়া আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে কৃতার্থ হইবেন । এক শ্রেণীর লোক সপ্তাহে একবার-প্রতি শুক্রবার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হইবেন । আর এক শ্রেণীর লোক প্রত্যহ একবার করিয়া আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করিবেন ।
আর দুনিয়াতে আল্লাহর প্রেম লাভই একমাত্র কাম্য ছিল এবং এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যাহারা দুনিয়ার যাবতীয় সুখশান্তি, আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসকে সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দিয়া সর্ব প্রকার দুঃখ, কষ্ট ও বিপদাপদকে হাসিমুখে বরণ করিয়া পরম শান্তিতে কাল কাটাইবেন । ফলতঃ বেহেস্তবাসীদের মধ্যে কেহই আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে বঞ্চিত হইবে না ।
No comments: