কেরামন কাতেবিন নামক ফেরেস্তাদ্বয় প্রত্যেক মানুষের দৈনন্দিন নেকী-বদী দেখিয়া দৈনিক আমলনামা তৈরি করেন এবং প্রতি বছর শবে বরাতের রাত্রে কারো কারো মতে -- শবে কদরের রাত্রে দৈনিক আমল নামা গুলি একত্র করিয়া বার্ষিক আমলনামা তৈরি করিয়া থাকে এবং মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের সবগুলি বার্ষিক আমলনামা একত্রিত করিয়া একখানা পাকা দলিল তৈরি করা হয় এবং এটি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যেক মানুষের কবর হতে উত্থানকালে আপনাপন আমলনামা স্বীয় গলায় ঝুলন্ত অবস্থায় লইয়া উঠিবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- প্রত্যেক মানুষের আমলনামা তাহার হাতে প্রদান করা হবে। আল্লাহ পাক কুরআন মজীদে বলেছেন, যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে তাহাদের হিসাব-নিকাশ খুব সহজেই সম্পন্ন করা হইবে এবং তারা খুশিমনে বেহেশতে প্রবেশ করবে।
আর
যাদের
আমলনামা
সম্মুখ
দিক
দিয়া
বাম
হাতে
দেওয়া
হবে
তাহাদের
হিসাব
অত্যন্ত
কঠিন
ভাবে
গ্রহণ
করা
হবে
এবং
তারা
একটা
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করার পর বেহেশতে যাবে আর যাদের আমলনামা পিছনের দিক দিয়া বাম হাতে দেওয়া হইবে তারা অনন্তকালের জন্য দোযখবাসী হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তি কে তার আমলনামা পাঠ করিতে হুকুম দেওয়া হবে।
তারা
নেক
কাজগুলির কথা দ্রুত পাঠ করিবে এবং যখন পাপ কাজের লেখাগুলি দেখতে পাবে তখন পাঠ করা বন্ধ রাখিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকবে।
ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাসা করিবেন-- থামিলে কেন? পড়ে যাও। তারা উত্তর করবে, আল্লাহ তায়ালার সামনে আমাদের পাপ কাজের কথাগুলি পাঠ করিতে খুব লজ্জা ও ভয় হইতেছে। ফেরেশতাগণ বলিবেন,
দুনিয়ায় যখন পাপ কাজ করিয়াছ তখন তো লজ্জা ও ভয় করো নাই, এখন লজ্জা ও ভয় করে কি লাভ হবে? এই বলিয়া অগ্নিময় লৌহগদার দ্বারা তাদের মস্তিষ্কে আঘাত করবে তখন বাধ্য হয়ে তারা পাপ কাজ গুলো পাঠ করিবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেহই কেয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখ হইতে সরিয়া যাইতে পারিবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমলনামা প্রাপ্ত হইবে
এবং উহা
নিজে পাঠ করিয়া না
শুনাবে। তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কিভাবে তোমার দুনিয়ার জীবন কাটাইছো? কিভাবে অর্থ উপার্জন করেছো? এবং কিভাবে তা খরচ করেছ, আমার দেওয়া পরমায়ু কতটা তুমি আমার আদেশ পালনে এবং কতটা দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও আরামের কাজে ব্যয় করেছ? আমলনামাগুলি পাঠ করার পর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করিবেন-- হে বান্দা এসব কাজ তুমি সত্যিই করেছ, না আমার ফেরেশতাগণ কিছু বেশ কম করে লিখিইয়াছে? সকলে এক বাক্যে স্বীকার করবে-- হে আল্লাহ! ইহা সবই সত্য, এতে কম বা বেশি করিয়া কিছু লেখা হয় নাই ।
যার আমলনামা উত্তম হবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন হে বান্দা দুনিয়াতে তুমি যে সকল গুনাহের কাজ করেছো আমি তা গোপন রাখছিলাম এবং আজ আমি তা মাফ করিয়া দিলাম-- তুমি বেহেস্তে চলে যাও। আর যার আমলনামা পাপে পরিপূর্ণ থাকবে হাশরের ময়দানে সকলকে সম্বোধন করিয়া ফেরেশতাগণ তার আমলনামা ঘোষণা করে শোনাইবে এবং বলবে-- হে হাশরবাসীগণ! দেখো, দেখো অমুকের পুত্র ওমুককে তাহার পাপের জন্য দোযখে লইয়া যাইতেছে।
যখনই ফেরেস্তাগণ কোন মহাপাপীর নাম উচ্চারণ করে—“অমুকের পুত্র অমুক দোযখে যাইতেছে” বলিবে, তখনই আযাবের ফেরেস্তাগণ দোযখ হইতে আগুনের পোষাক ও আগুনের জিঞ্জির লইয়া আগাইয়া আসিবে এবং তাকে সেটা পরাইয়া দুযখের দিকে টানিয়া লইয়া যাইবে। রিয়াকারদের বিচার সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণিত আছে,
আল্লাহ তায়ালা একজন আলেমকে সম্বোদন করিয়া বলিবেন-- দুনিয়ায় আমি তোমাকে অসংখ্য নিয়ামত প্রধান করেছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি আমার জন্য কি করেছ? সে উত্তর করবে-- আল্লাহ আপনি তো জানেন যে, দুনিয়াতে আমি এলেম শিক্ষা করেছিলাম এবং তাদ্বারা আমি লোকদিগকে তোমার পথে আহবান করেছিলাম। আল্লাহ তা'আলা বলবেন-- তুমি মিথ্যা কথা বলতেছ, দুনিয়ায় তুমি মিথ্যা কথা বলেছ, দুনিয়াতে তুমি সুনাম অর্জন ও অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করেছিলে, তোমার সে উদ্দেশ্য দুনিয়াতেই সফল হয়েছে অতএব এখন আমার নিকট আর কিছুই পাবে না। তারপরও ফেরেশতাগণ তাকে দোযখের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
ঠিক অনুরূপভাবে বহু দাতা, হাফেজ, ক্বারী, হাজী, গাজী কেও আল্লাহ তায়ালা বলিবেন-- তুমি দুনিয়ায় সুখ্যাতি অর্জন ও অর্থ উপার্জন করার উদ্দেশ্যে হাফেজ হয়েছিলে, জেহাদ করেছিলে, দান করেছিলে, দুনিয়াতেই তোমার সে উদ্দেশ্য সফল হইয়াছে, অতএব এখন আর আমার নিকট তোমার কোন পাওনা বাকী নাই। এইভাবে বহু আলেম, হাফেজ, ক্বারী, দাতা, শহীদ, গাজী কে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। ফলতঃ আল্লাহ তাআলা যার নিকট থেকে কড়াকড়িভাবে তন্ন তন্ন করিয়া হিসাব গ্রহণ করবেন, তাহার নেকির পরিমাণ যতই বেশি হোক না কেন, সেই নেকীর বলে বেহেশতে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব হবে না। এজন্য রাসুল (সাঃ) বলেছেন-- তোমরা আখিরাতের মুক্তির জন্য আপনাপন নেকীর উপরে নির্ভর করিও না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সর্বদা চেষ্টা ও প্রার্থনা করবে।
আল্লাহতালা যদি কারো প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তবে তার শত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে মাফ করিয়া দিবেন।
এ
সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণিত আছে- কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা এক ব্যক্তিকে তার আমলনামা দেখাইয়া বলিবেন—বলতো, এই গুনাহের কাজ গুলি তুমি করিয়াছিলে কিনা? সে উত্তর করবে-হাঁ আল্লাহ এইগুলি আমি করেছিলাম। আল্লাহ তাআলা বলবেন কেন করেছিলে? তুমি কি আমাকে ভয় করতে না? অথবা তুমি কি জানতে না যে আমি তোমাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজের সংবাদ অবগত আছি? সে তখন কোন উত্তর দিতে না পারিয়া ভয়ে থর থর করিয়া কাঁপিতে থাকবে। তার মনে তখন বিশ্বাস হবে যে, দোযখ হতে রক্ষা পাওয়ার এবং বেহেস্তে গমন করার তার আর কোন আশা নাই।
পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা দেখিয়া বলিবেন-- তোমার ভয়ের কোন কারন নাই, দুনিয়ায় আমি যেমন তোমার গুনার কাজ গুলি গোপন করিয়া রাখিয়াছিলাম, আজও আমি তোমার জন্য তাই করিব।
তোমাকে
আমি
আজ
লোকের
সামনে
লজ্জিত
করিব
না
যেহেতু
তুমি
সর্বদা
আমার
উপরে
নির্ভর
করতে
ও
আমার
রহমত
লাভের
আশা
হৃদয়ে
পোষণ
করিতে
ও
আমার
নিকট
ক্ষমা
প্রার্থনা করিতে।
যাও
বান্দা,
আমি
তোমাকে
মাফ
করে
দিলাম।
No comments: