হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে—প্রত্যেক মানব সন্তান তাঁহার মাতার উদরে অবস্তানকালে তাঁহার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন । শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাহার কর্তব্য শেষ হইয়া যায় । যে পর্যন্ত সে বালেগ না হয় অর্থাৎ যে পর্যন্ত তাহার উপর নামাজ ফরজ না হয়, সেই পর্যন্ত উক্ত ফেরেস্তাটি তাহার রক্ষণা-বেক্ষণে নিযুক্ত থাকে ।
যেই মাত্র তাঁহার উপরে নামাজ ফরজ হওয়ার বয়স হয়,তখন উক্ত ফেরেস্তাটিও চলিয়া যায় এবং তাঁহার স্তলে কেরামন-কাতেবীন নামক দুইজন ফেরেস্তা নিযুক্ত হয় ।
কেরামন কাতেবীন ফেরেস্তাদ্বয় সর্বদা তাহার দুই কাঁধে অবস্তান করে । এদের প্রধান কাজ বান্দা দিবা রাত্রির মধ্যে যে সকল নেক ও গোনাহর কাজ করে তাহা লিখিয়া রাখা । তাছারা তাঁহার রক্ষণাবেক্ষণের ভারও উহাদের উপরেই ন্যাস্ত থাকে ।ফলতঃ কেরামন-কাতেবীন কোন ফেরেস্তার নাম নয়—ইহা তাহাদের পদবী মাত্র ।
ইহার অর্থ সম্মানিত লেখকদ্বয় । কেরামন কাতেবীন পদবী বিশিষ্ট ফেরেস্তার সংখ্যা অনেক । তাহাদের সঠিক সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহই জানে না। আমরা শুধু এইমাত্র জানি যে,
তারা অসংখ্য। মানব সৃষ্টির শুরু হইতে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি হইয়াছে এবং হইবে কেরামন কাতেবীনের সংখ্যাও ঠিক ততো জন ।
প্রত্যক মানুষের জন্য দইজন করিয়া ফেরেস্তা নিযুক্ত হয় এবং তাহারা তাঁহার মৃত্য পর্যন্ত তাঁহার সঙ্গে থাকে । যখন কোন লোকের মৃত্য হয়, তখন তাহার জন্য নিযুক্ত ফেরেস্তাদ্বয় আল্লাহ তায়ালার নিকট আরজ করে— হে আল্লাহ! আমাদের কর্তব্য তো ফুরাইয়া গিয়াছে, এখন আমরা কি করিব?
তখন আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেন—তোমরা ঐ ব্যক্তির কবরে বসিয়া তাসবীহ তাহলীল পাঠ করিতে থাক ।
যদি মৃত ব্যক্তি মুমীন লোক হয়, তবে তাহাদের তসবীহ পাঠের ছোয়াব তাহার নামেই লেখা হয় ।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন—যখন কোন ব্যক্তি কোন নেক কাজ করার ইচ্ছা করে তখন তাহার ডান কাঁধের ফেরেস্তাটি তখনই সেই কাজের নেকী তার আমলনামায় লিখিয়া ফেলে ।
পক্ষান্তরে যখন কোন লোক গোনাহর কাজ করিয়া ফেলে, তখন বাম কাঁধের ফেরেস্তাটি সেই কাজের গোনাহ তাহার আমলনামায় লিখিতে উদ্যত হইলে ডান কাঁধের ফেরেস্তা তাহাকে বাঁধা দিয়া বলে—একটু অপেক্ষা কর । হয়তো সে তাহার কৃত কাজের জন্য অনুতপ্ত হইয়া তওবা করিতে পারে ।
যদি সেই ব্যক্তি দিবা রাত্রির মধ্যে কোন এক সময়ে তাহার কৃতকাজের জন্য অনুতপ্ত হইয়া তওবা করে,
তবে আর সেই গোনাহটি তাহার আমলনামায় লিখা হয় না, আর যদি সে তওবা না করে, তবে তাহার আমলনামায় একটি গোনাহ লেখা হয় ।
No comments: