কিয়ামতের দিন দোযখ ভীষণ গর্জন করিয়া বলিতে থাকিবে—হে আল্লাহ!
আপনি আপনার দেওয়া ওয়াদা পালন করিয়া আমার উদর পর্ণ ও ক্ষুধা নিবৃত্ত করুন ।
আমি কোটি কোটি বৎসর যাবত আশা করিয়া আছি যে, পাপী জ্বীন ও মানুষের দ্বারা আমার ক্ষুধা নিবৃত্তি করিব ।
এই বলিয়া সে তাঁহার ভীষণ লোল জিহ্বা বাহির করিয়া পাপীদিগকে গ্রাস করিতে উদ্যত হইলে হাশরের ময়দানের লোকগণ ভয়ে অস্থির হইয়া দৌড়াইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট যাইয়া আবেদন জানাইবে ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে পার্থনা
করিবেন-হে আল্লাহ! আপনি দোযখকে শান্তি করুন ।
তখন আল্লাহ পাক রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট কয়েক ফোঁটা পানি দিয়া বলিবেন—
হে আমার প্রিয় হাবীব! আপনি এই পানি কয়েক ফোটা দোযখে নিক্ষেপ করুন ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সেই পানিটুকু দোযখের অগ্নির মধ্যে ছিটাইয়া দেওয়া মাত্র দোযখের অগ্নি সেখান হইতে বহুদূর চলিয়া যাইবে ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরজ করিবেন—হে আল্লাহ! এইগুলি কিসের পানি—
যাহার সামান্য কয়েক ফোটা ছিটাইয়া দেওয়ায় দোযখ যেন ভীত হইয়া বহুদূর পালাইয়া গেল?
আল্লাহ পাক বলিবেন—ইহা আমার একজন প্রিয় বান্দার চোখের পানি । দোযখ সবই হজম করিতে পারে; এমনকি সাত সমুদ্রের পানিও সে শুষিয়া লইতে পারে, কিন্তু আমার নেক বান্দাদের চোখের পানি সে কিছুতেই সহ্য করিতে পারে না ।
হাদীস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন—তিন প্রকার চক্ষু বিশিষ্ট মানুষের প্রতি দোযখের অগ্নি হারাম করা হইয়াছে । যথা—
১. যে চক্ষু আল্লাহর মুহব্বতে বা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে ।
২. যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় রাত্রি জাগরণ করে ।
3. যে চক্ষু আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু সামনে পড়ামাত্র নিম্নগামী হয় ।
আমি মিকাইল ফেরেস্তাকে কোনদিন হাসিতে দেখি নাই, ইহার কারণ কি?
জিবরাঈল (আঃ) উত্তর করিলেন—যেদিন হইতে দোযখ সৃষ্টি হইয়াছে সেই দিন হইতে মিকাঈল ফেরেস্তার প্রাণে এইরূপ ভয়ের সঞ্চার হইয়াছে যে, দিবা রাত্রির মধ্যে একটি মুহূর্তও তাঁহার অন্তর হইতে সেই ভয় দূ্রীভূত হয় না । এই জন্য সে কখনও হাসে না—বরং কোন কোন সময় দোযখের ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে একটা চড়ুই পাখির মত ছোট হইয়া যায় ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন—হে ভাই জিবরাঈল! দোযখের শাস্তির কিছু বর্ণনা করুন ।
জিবরাঈল (আঃ) বলিলেন—যে আল্লাহ আমাকে ফেরেস্তা ও আপনাকে নবীরূপে পয়দা করিয়াছেন, আমি সেই সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কসম দিয়া বলিতেছি—দোযখের অগ্নি হইতে একটি সূচের অগ্রভাগের পরিমাণ অগ্নি যদি দুনিয়ায় আনা হয়,
তবে উহার গরমে দুনিয়ার সমস্ত প্রাণী মৃত্যু বরণ করিবে ।আর দোযখবাসীদের শরীর হইতে যে ঘাম বাহির হইবে, উহা হইতে এক সরিষা পরিমাণ ঘাম যদি দুনিয়ায় আনা হয়,
তবে উহার দূর্গন্ধে দুনিয়ার সমস্ত প্রাণী অজ্ঞান হইয়া যাইবে ।
দোযখবাসীদের যে সকল জিনজির দ্বারা বাঁধা হইবে, তাঁহার একটি জিনজিনের বোঝা বহন করার ক্ষমতা দুনিয়ার কোন মানুষের তো দূরের কথা; একটি পাহাড়ও বহন করিতে পারিবে না ।
পাথর, মানুষ ও জ্বীনগণ দোযখের ইন্ধন হইবে । যাক্কুম নামক অগ্নিময় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ হইবে দোযখীদের খাদ্য, আর রক্ত ও পুঁজ হইবে তাহাদের পানীয় ।
দোযখের শাস্তির এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শুনিয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শরীরের বর্ণ জরদ ও মুখের চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করিল । তাঁহার দুই চক্ষু দিয়া দরদর ধারায় পানি বাহির হইতে লাগিল ।
No comments: